রাজনীতি

শমসের–তৈমুরকে ‘জাতীয় বেইমান’ বললেন তৃণমূল বিএনপির অন্য প্রার্থীরা

বাংলার কথা বাংলার কথা

প্রকাশিত: ১০:১৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৯, ২০২৩

‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া  তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন শমসের মুবিন চৌধুরী ও মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার তাঁদের মাঠে নামিয়ে এখন আর খোঁজ নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন তৃণমূল বিএনপি থেকে বিভিন্ন আসনে প্রার্থী হওয়া নেতারা। তাঁরা দলের শীর্ষ দুই নেতাকে ‘জাতীয় বেইমান’ আখ্যায়িত করেছেন। শমসের, তৈমুর ও তৃণমূল বিএনপির নির্বাহী চেয়ারপারসন অন্তরা হুদা দলের তহবিল থেকে টাকা তছরুপ করেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে দলীয় সংকট সমাধান করে নির্বাচনের মাধ্যমে তৃণমূল বিএনপি যেন সংসদের বিরোধী দল হতে পারে, সে জন্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ও তাঁর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন দলটির এই নেতারা।

আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে এক সভায় তৃণমূল বিএনপির এই নেতারা এসব কথা বলেন। ‘তৃণমূল বিএনপির সব প্রার্থীর সঙ্গে মতবিনিময় ও আলোচনা সভা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে দলের কো-চেয়ারপারসন কে এ জাহাঙ্গীর মাজমাদার এবং সভাপতি হিসেবে দলের ভাইস চেয়ারপারসন মেজর (অব.) ডা. শেখ হাবিবুর রহমানের অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও তাঁরা আসেননি। সভায় বিভিন্ন আসনে তৃণমূলের প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা দাবি করেছেন, দলের ১৩০ জন প্রার্থী এখন তাঁদের সঙ্গে আছেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা-১৫ আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী খন্দকার এমদাদুল হক ওরফে সেলিম। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে তৃণমূল বিএনপির বরগুনা-১ আসনের প্রার্থী ইউনুস সোহাগ, ময়মনসিংহ-৪ আসনের প্রার্থী দীপক চন্দ্র গুপ্ত, ঢাকা-৬ আসনের প্রার্থী কাজী সিরাজুল ইসলাম, নেত্রকোনা-৪ আসনের প্রার্থী আল মামুন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

নির্বাচনে তৃণমূল বিএনপির ১৩৭ জন প্রার্থী আছেন জানিয়ে খন্দকার এমদাদুল হক বলেন, দলের চেয়ারপারসন ও মহাসচিব আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখছেন না। আমাদের সুবিধা-অসুবিধা, কীভাবে আমরা নির্বাচন করছি, আমাদের কী প্রয়োজন, সে ব্যাপারে কোনো খোঁজখবর রাখছেন না। দলের শীর্ষ দুই নেতা সবার সঙ্গে আলোচনা করে প্রার্থী দিলে তৃণমূল বিএনপি ৩০০ আসনেই প্রার্থী দিতে পারতো এবং অন্তত ১০০ আসন নিয়ে সংসদে বিরোধী দল হতে পারতো। ওই দুই জাতীয় বেইমানের কারণে এটা হয়নি। তাঁরা তৃণমূল বিএনপির যে অবস্থা করেছেন, তাতে আমরা কষ্ট পাচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমরা আমাদের দলের বিষয়ে আলোচনা করতে চাই।’

নির্বাচনের মাধ্যমে তৃণমূল বিএনপি যেন সংসদে বিরোধী দল হতে পারে, সে জন্য দলটিতে চলমান সমস্যা সমাধানে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ও তাঁর হস্তক্ষেপ কামনা করেন এমদাদুল হক। তিনি বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, আমরা দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে চাই। বিদেশিদের ও বিএনপির ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে আমরা জনগণের পাশে থাকতে চাই। কিন্তু আমাদের অবস্থা কী? শমসের ও তৈমুরের উদ্দেশ্য ভিন্ন। তাঁদের মুখে এক কথা, অন্তরে আরেক কথা। তাঁদের বহিষ্কার করে তৃণমূল বিএনপিতে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে এলে আমরা খুশি হব। ১৩৭ জন প্রার্থীর মধ্যে ওই দুজন বাদে সবাই আমাদের সঙ্গে আছেন।’

যশোর-৫ আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী মেজর (অব.) আবু নসর মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, দেশে সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে আমরা যে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছি এবং করছি, তাতে বাধা তৈরি করেছেন দুই বেইমান শমসের মুবিন ও তৈমুর আলম। নজিরবিহীন অসমন্বয় করে আমাদের উলঙ্গ করে তাঁরা মাঠে ছেড়ে দিয়েছেন। শমসের, তৈমুর ও অন্তরা হুদা দলের তহবিল থেকে টাকা তছরুপ করে আমাদের উলঙ্গ করে নির্বাচনী মাঠে যে তামাশা করছেন, জাতির কাছে তার হিসাব দিতে হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সমস্যার সমাধান না হলে আমরা কঠোর হতে বাধ্য হব। ৬০ জন প্রার্থীকে নিয়ে আমি আমরণ অনশনে যেতে বাধ্য হবো।

শমসের মুবিন ও তৈমুর আলমকে ‘যুগশ্রেষ্ঠ মীর জাফর’ আখ্যায়িত করে নেত্রকোনা-৫ আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী আবদুল ওয়াহাব হামিদী বলেন, তাঁরা যেকোনো মূল্যে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে নেমেছেন। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত অভিভাবকত্বমূলক সহযোগিতা চান তিনি।

শমসের মুবিন ও তৈমুর আলম বিএনপির সঙ্গে আঁতাত করেছেন বলে অভিযোগ করেন গোপালগঞ্জ-২ আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী জামাল উদ্দিন শেখ। কুমিল্লা-২ আসনে দলটির প্রার্থী মাইন উদ্দিন চলমান সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অনুষ্ঠানের সভাপতি খন্দকার এমদাদুল হক বলেন, ‘শমসের মুবিন ও তৈমুর আলমের আচরণে মনে হচ্ছে, তাঁরা পরোক্ষভাবে আমাদের নির্বাচন থেকে সরে যেতে বলছেন। আমাদের আলোচনার জন্য ঢাকায় ডেকে নিয়ে এসে ২৬ ডিসেম্বর বেলা ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত গুলশানে আমাদের বসিয়ে রেখেছেন। চার দিন ধরেই আমাদের ঢাকায় বসিয়ে রাখা হয়েছে।’

আরেক প্রার্থী মেজর (অব.) আবু নসর মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, এই মুহূর্তে প্রার্থীদের জন্য প্রতিটি মুহূর্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমন পরিস্থিতিতে ২৬ জানুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত চার দিন সংসদ সদস্য প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ করে ঢাকায় এনে বসিয়ে রাখা হয়েছে। এর চেয়ে নির্লজ্জ তামাশা আর কী হতে পারে?