রাজনীতি

এখন সরকার ডামি ভোটার সৃষ্টিতে নজর দিয়েছে : বিএনপি

বাংলার কথা বাংলার কথা

প্রকাশিত: ৫:০৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৫, ২০২৪

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী-দল বিএনপি অভিযোগ করেছে, ডামি প্রার্থী এবং ডামি দলের পর সরকার এখন ডামি ভোটার সৃষ্টি করার জন্য নজর দিয়েছে। বর্তমানে তারা যে পরিস্থিতিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তা আগের তুলনায় ভিন্ন এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে। আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক দেখানোর জন্য ডামি ভোটার ব্যবহার করা হচ্ছে।

শুক্রবার সকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খানের বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন। শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান।

ড. মঈন খান বলেন, ৭ জানুয়ারির একতরফা ও ভাগ বাটোয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে দেশে-বিদেশে হাস্যরস ও সমালোচনা চলছে সরকার নিজ দায়িত্বে প্রতিদিন সেটাকে প্রহসন ও সহিংসতার নতুন মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে। ডামি প্রার্থী ও ডামি দল উৎপাদন করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি, তারা এখন ডামি ভোটার সৃষ্টিতে নজর দিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে জনগণকে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।

সবশেষ আগামী ৭ জানুয়ারি ভোট অনুষ্ঠানের দিন এবং তার পরের দিন হরতালের ডাক দিয়েছে বিএনপি। বাংলাদেশে এর আগে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের পরবর্তী সময়েও এই দলটিকে খুব একটা সক্রিয় অবস্থায় দেখা যায়নি। আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বিএনপির আন্দোলন নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, এবারের পরিস্থিতি-পরিবেশ সম্পূর্ণ আলাদা। সরকারের যে এজেন্ডা, সরকারের মুখোশ আজ উন্মোচিত হয়ে গেছে। কাজেই আমাদের আন্দোলন চলতেই থাকবে।

তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি আসলে বদলায়নি এবং বিএনপি তাদের কৌশলে পরিবর্তন না আনলে নির্বাচনের পর নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়তে পারে বিএনপি।

‘আন্দোলন চলবে’
২০২২ সালের ১০ই ডিসেম্বরের আগে বিভাগীয় শহরগুলোতে বড় ধরনের সমাবেশ করে আন্দোলন চাঙ্গা করে তোলে বিএনপি। ১০ই ডিসেম্বরের ঢাকায় সমাবেশসহ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত ২৮শে অক্টোবর সর্বশেষ ঢাকায় সমাবেশ করে বিএনপি। তবে ওই সমাবেশের পর আবারো স্তিমিত হয়ে পড়ছে দলটির আন্দোলন। আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দলটির আন্দোলন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ার শঙ্কা আছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. মঈন খান বলেন, এবারের পরিস্থিতি-পরিবেশ সম্পূর্ণ আলাদা। সরকারের যে এজেন্ডা, সরকারের মুখোশ আজ উন্মোচিত হয়ে গেছে। কাজেই আজকের পরিস্থিতিতে আমাদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমাদের আন্দোলন চলতেই থাকবে। ২০১৪ সাল ও ২০২৪ সাল এক নয়। সরকার ২০১৪ বা ১৮তে যে পরিস্থিতিতে ছিল, আজকে তারা সে পরিস্থিতিতে নেই। সরকারের এই যে জারিজুরি ও ধাপ্পাবাজি, সেটা বিদেশে প্রকাশিত হয়ে গেছে। গণতান্ত্রিক অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিএনপি দেশ জুড়ে যে আন্দোলন করে আসছে তার অর্জন কতটা এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, বিএনপির আন্দোলনের অর্জন হচ্ছে, এই আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করা গেছে। জনগণকে নিয়ে আমরা সমাবেশ করেছি। লক্ষ লক্ষ মানুষ। সব মিলিয়ে কোটি মানুষের ঊর্ধ্বে মানুষকে নিয়ে, সম্পৃক্ত করে আমরা(আন্দোলন) করেছি। এটা একটা দিক।

বিএনপির আন্দোলনের শুরু থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় দলীয় সরকারের অধীনে হতে যাওয়া ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের অংশ নেয়নি বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে না বিধায় এতে অংশগ্রহণ করছে না বিএনপি। নির্বাচন তো হচ্ছে না। এটা যদি সত্যি একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হতো নিশ্চয়ই আমরা অংশগ্রহণ করতাম। এই সাজানো পাতানো নির্বাচন, এই ভুয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অর্থ হচ্ছে এই, যে ফলাফল তো জানাই আছে। যে নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারিত, সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাটাতো চরম বোকামি। তবে বিএনপি নির্বাচনকে প্রতিহত করতে চায়নি। বিএনপি নির্বাচন প্রতিহত করতে চায় না, কারণ প্রতিহত করাটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নয়। বরং বিএনপি নির্বাচনকে বর্জন করবে। আমরা যেটা বলছি সেটা হচ্ছে নির্বাচনকে বর্জন করবো। আমরা এটা বর্জন করছি এবং মানুষকে বলছি, আপনারা ভোটদান থেকে বিরত থাকুন। এই যে একটা সাজানো নির্বাচন, এটাকে আমরা লেজিটিমাইজ(বৈধতা দিতে) করতে চাই না। এটা হচ্ছে আমাদের মূল কথা। আমরা নির্বাচনকে বর্জন করি নাই। আমরা প্রহসনের নির্বাচনকে বর্জন করেছি।

‘পরিস্থিতি বদলায়নি’
গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিএনপি যে আন্দোলন করে আসছে তার শুরু থেকেই ক্ষমতাসীন সরকারের পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিভাগীয় শহরগুলোতে সমাবেশ, নানা সময়ে বিবৃতি, সমাবেশ, মিছিল, হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি ।

তবে তাদের আন্দোলনের এই কৌশল তাদের দাবি আদায়ের জন্য যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এ ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে জানান দেয়া যায় যে বিএনপি নামে একটি রাজনৈতিক দল মাঠে আছে। কিন্তু এসব কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো যায় না। ক্ষমতার রাজনীতিতে বিএনপির এ ধরনের কৌশল খুব একটা কাজ দিচ্ছে বলে মনে করেন না বিশ্লেষকরা। বরং এই সময়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময় নানা ধরনের কৌশল গ্রহণ করেছে এবং তারা তাতে সফলও হয়েছে বলে মত তাদের। আন্তর্জাতিক চাপ ও যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির কারণে সহিংস কোন পদক্ষেপ নেয়া বিএনপির পক্ষে সম্ভব নয়। তবে তারা যে আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে তাতেও কাজ হবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগ ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ কোনবারই তারা এক রকমের কৌশল নেয়নি। প্রতিবারই আলাদা কৌশল নিয়ে তাতে সফল হয়েছে দলটি। কিন্তু বিএনপির কৌশলে কোন পরিবর্তন আসেনি। বিএনপির অস্ত্রশস্ত্র সব ভোঁতা হয়ে গেছে। এটা দিয়ে খুব একটা সুবিধা হবে না তাদের। তাদের নতুন কিছু চিন্তা করতে হবে। তাদের আন্দোলনের মোড় ঘোরাতে হলে আগে পরিকল্পনা থাকতে হবে। নির্বাচনের পরে তারা কী করবে? অতীতে যা করেছে তাই করবে হয়তো। তারা নতুন কোন কৌশল উৎপাদন করতে পারছে না এবং শেখ হাসিনার কাছে তাদের কৌশলগুলো মার খাচ্ছে। নির্বাচনের পরেও তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার যে কথা বলছে সেটা হয়তো তাদের কর্মীদের আশ্বাস দেয়ার জন্য হতে পারে। এতে কোন ফল আসবে বলে তিনি মনে করেন না। ২০১৪ বা ২০১৮ সালের তুলনায় বর্তমান পরিস্থিতি বিএনপির জন্য খুব একটা আলাদা নয়। উল্টো নির্বাচনের পর তাদের পরিস্থিতি নেতিবাচক হতে পারে। পরিস্থিতি বিএনপির জন্য আরো খারাপ হতে পারে। মানে আরো বেশি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া, আরো এলিয়েনেটেড হয়ে যাওয়া, আরো বেশি সরকারি নির্যাতনের শিকার হওয়া, এগুলো হতে পারে।