রাজনীতি

জনগণকে সর্বাত্মকভাবে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান চরমোনাই পীরের

বাংলার কথা বাংলার কথা

প্রকাশিত: ৫:২৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৪, ২০২৪

রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে সর্বশেষ অনুরোধ জানিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী অবিলম্বে বিদ্যমান কলঙ্কিত জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে দেশবিরোধী প্রহসনের নির্বাচন বন্ধ করুন। বিরোধীদলের সম্মানিত নেতৃবৃন্দকে কারাগার থেকে মুক্তি দিন। সকল রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় সরকার গঠনের রূপরেখা ঘোষণা দিন। নয়তো সম্ভাব্য বিপর্যয়ের দায় থেকে আপনিও রক্ষা পাবেন না। সরকারের যদি ন্যূনতম দেশপ্রেম থাকে তাহলে আপনারা দ্রুত পদত্যাগ করুন, প্রহসনের নির্বাচন বন্ধ করুন, কারাবন্দী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিন। জনগণের ভোটাধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার ও মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিন। রাজনৈতিক কারণে সকল প্রকার জুলুম এবং হয়রানী বন্ধ করুন। দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করুন। দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে ৭ জানুয়ারি প্রহসনের নিবৃাচন বন্ধ করে অবৈধ সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে পূন:তফসিল ঘোষণা করুন। জনগণকে সর্বাত্মকভাবে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানান তিনি।

আজ (৪ জানুয়ারি) বৃহস্পতিবার দুপুরে পুরানা পল্টনস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একতরফা প্রহসনের নির্বাচন বন্ধ, বিদ্যমান পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের দাবী এবং চলমান রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, আলহাজ্ব খন্দকার গোলাম মাওলা ও অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম ও ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ,  সহকারি মহাসচিব হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ ও মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম ও কৃষিবিদ আফতাব উদ্দিন, কেএম আতিকুর রহমান, মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরী, মাওলানা মোহাম্মদ নেছার উদ্দিন, অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন, মাওলানা খলিলুর রহমান, জিএম রুহুল আমীন, অ্যাডভোকেট এম হাসিবুল ইসলাম, মাওলানা আরিফুল ইসলাম, মাওলানা নুরুল করীম আকরাম, অধ্যাপক নাসির উদ্দিন খান, ছাত্রনেতা শরিফুল ইসলাম রিয়াদ প্রমূখ।

সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে ৫ দফা দাবি তুলে ধরেন চরমোনাই পীর। ১. ৭ জানুয়ারী একতরফা প্রহসনের নির্বাচন বন্ধ করতে হবে। ২. বিদ্যমান জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে। ৩.নিবন্ধিত এবং আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে, জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। ৪.বর্তমান নির্বাচন কমিশন ভেঙ্গে দিতে হবে এবং জাতীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পূণঃতফসিল ঘোষণা করবে। ৫. রাজনৈতিক কারণে বিরোধীদলের কারাবন্দী সকল নেতা-কর্মীর মুক্তি দিতে হবে।

লিখিত বক্তব্যে চরমোনাই পীর বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে স্বৈরতন্ত্র এমন “সাংবিধানিক ও আইনসম্মত” রূপ নিয়ে জনতার ওপরে চেপে বসে আছে এবং আরো দীর্ঘায়িত হতে চাচ্ছে দেখে খুবই মর্মাহত ও ব্যথিত না হয়ে পারা যায় না। একটি সভ্য-স্বাধীন দেশের দায়িত্বশীল রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আমরা সরকারকে বারবার সতর্ক করেছি। স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা, নির্বাচন নামের তামাশা, জুলুম, নির্যাতন, লুটতরাজ ও দুর্নীতি থেকে সরিয়ে রাখার জন্য এবং দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি নিয়ন্ত্রণ, গণ অধিকারসমূহ রক্ষায় সকল পন্থা অবলম্বন করেছি। রাজপথে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন, জনমত গঠন ও জনমতের প্রকাশসহ সম্ভাব্য সব কিছুই আমরা করেছি। প্রত্যাশা ছিলো, সরকারে থাকা ব্যক্তিবর্গের বোধোদয় ঘটবে; তারা দেশকে গৃহযুদ্ধ ও সংঘাতের দিকে ঠেলে দেবে না। দেশের অর্থনীতি এবং জনগণের জীবনযাত্রাকে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাবে না। সরকার দেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়ে, অর্থনীতিকে ধ্বংশ করে হলেও ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। রাজনীতিতে হীন থেকে হীনতর সব কৌশল অবলম্বন করে তারা ক্ষমতায় থাকার পাঁয়তারা করে যাচ্ছে। সত্যি বলতে কি; আধুনিককালে কেউ ক্ষমতায় থাকার জন্য এতটা নির্লজ্জ, দেশের প্রতি এতো আত্মঘাতি, এতো হিংস্র ও এতোটা বেপরোয়া হতে পারে, তা আমাদের ভাবনায় ছিলো না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যেভাবে ক্ষমতায় থাকার একটা অসুস্থ্য প্রতিযোগিতা লক্ষ করা যায়, তারই একটি বিকৃত ও নোংরা উপস্থাপনা হিসেবে আমরা বর্তমান সমস্যাকে বিবেচনা করছিলাম। কিন্তু বর্তমান সরকারের কার্যক্রম আরো উদ্ধত, বেপরোয়া ও শঠতাপূর্ণ।

চরমোনাই পীর বলেন, রাজনীতিকেই ধ্বংস করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে হত্যা করা হয়েছে। দেশের সম্পদ লুটেপুটে খেয়ে নিয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্কগুলোকে হুমকির মুখে ফেলেছে এবং ইতিহাসের নিকৃষ্টতম শঠতায় প্রহসনমূলক নির্বাচনের অপচেষ্টা করছে। একই সাথে শিক্ষা সিলেবাসের নামে জাতির ভবিষ্যত প্রজন্মকে শেষ করার পাঁয়তারা করছে। সরকারের আজ্ঞাবহ দলদাস নির্বাচন কমিশন আগামী ৭ জানুয়ারী প্রহসনমূলক একতরফা নির্বাচনের যে ঘোষণা দিয়েছে, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নির্লজ্জ ও শঠতাপূর্ণ নির্বাচন কেউ কখনো দেখেছে বলে মনে হয় না। ক্ষমতাসীন সরকার ২০১৪ সালে করলো একতরফা প্রহসনের নির্বাচন, ২০১৮ সালে করলো রাতের ভোট আর ২০২৪ সালে এসে করছে ডামি নির্বাচন। নিজ দলের একাধিক প্রার্থী বিভিন্ন নামে দাড় করানো, জেল থেকে মুক্তি দেয়ার লোভ দেখিয়ে বিরোধী নেতাদের নির্বাচনে দাড় করানো, কিংস পার্টি গড়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ানোর অপচেষ্টা করার মতো এই সরকার যা করছে, তাতে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম নির্বাচনের উদাহারণ হয়ে থাকবে এই নির্বাচন। নির্বাচন নিয়ে কতবড় নোংরামী হয়েছে তার উদাহারণ হয়ে থাকবে কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্য। তিনি প্রকাশ্যেই বলেছেন, নির্বাচনে অংশ নেয়ার শর্তে কারাগারে থাকা সকল বিরোধী নেতাকে মুক্তির প্রস্তাব দেয়া হয়েছিলো। তার এই বক্তব্য প্রমাণ করে যে, কারাগারে থাকা না থাকার মতো যে বিষয় আদালতের ওপরে নির্ভরশীল তাও এখন এই সরকার কুক্ষিগত করে নিয়েছে। নির্বাচন নিয়ে সরকারের এমন নির্লজ্জ ও বেপরোয়া হওয়ার কারণ আমরা বুঝতে পারি। গবেষণা সংস্থা সিপিডির সদ্য প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা শুধু ব্যাংক খাত থেকে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লুট করেছে। খেলাফি ঋণের নামে যা লুট করা হয়েছে তার হিসাব আলাদা। অবৈধ ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগের লোকেরা কত অবৈধ সম্পদ কামিয়েছে; তার একটা ছোট দৃষ্টান্ত হলো, পাঁতানো এই নির্বাচনে অংশ নেয়া আওয়ামী প্রার্থীদের ৮৭%ই কোটিপতি। ১৮ জনের সম্পদ শতকোটি টাকার ওপরে। এক মন্ত্রীর একারই বিদেশে দুই হাজার তিনশ বারো কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে, যা হলফনামায় গোপন করা হয়েছে। এর আগে এস আলম গ্রুপের এক বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করার কথাও জাতি জেনেছে। ফলে এই নির্বাচন তাদের লুটতরাজ বহাল রাখা এবং আইনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার অবলম্বন হয়ে দাড়িয়েছে।

প্রহসনের নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বিরোধীদলগুলো অংশ না নেয়ার প্রধান যুক্তিউল্লেখ করে চরমোনাই পীর বলেন, প্রার্থীদের নিরাপত্তা এবং ভোটারদের স্বাধীন মত প্রকাশে বাধা দেয়ার আশংকা। আমাদের আশংকা যে যৌক্তিক ও যথার্থ ছিলো তা এই পাঁতানো ও শঠতাপূর্ণ নির্বাচনেও প্রমাণিত হয়েছে। এরই মধ্যে সারা দেশে প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীদের উপর আক্রমন, গুলিবর্ষণ, ভোটারদের মার-ধর, হুমকি-ধমকি, প্রচারনায় বাধা, নির্বাচনী ক্যাম্পে অগ্নি সংযোগ ও গাড়ি বহরে অগ্নি সংযোগসহ সহিংসতা ও সংঘর্ষের শত শত ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে নির্বাচনী অনিয়ম ও সংঘাত সংঘর্ষের প্রায় সাড়ে পাঁচশত অভিযোগ নির্বাচন কমিশনে জমা পরেছে। এসব ঘটনার প্রায় সবগুলোই ঘটিয়েছে আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এবং তাদের কর্মী সমর্থকরা। যে সব জায়গায় সংঘাত সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- মাদারীপুুরে এবং বরিশালে নির্বাচনী সহিংসতায় ২ জন নিহত। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ-১, ঝিনাইদহ-১, রাজশাহী-১, ২, ৪ ও ৫, নাটোর, নওগাঁ, টাঙ্গাইল, বরিশাল-২, গাজীপুর-১, ২ ও ৩, খুলনা-৫, নেত্রকোণা-১, রংপুর-২, রাজবাড়ী-২, মানিকগঞ্জ-২, চট্টগ্রাম-১, ৩, ১২, ১৫ ও ১৬, শরিয়তপুর, মাদারীপুর-৩, ফরিদপুর-৩, গোপালগঞ্জ-১, জয়পুরহাট-২, পাবনা-১, সিরাজগঞ্জ-৩, ৫ ও ৬, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা-১, খুলনা-৪, বগুড়া-১ ও ৪, কক্সবাজার-৪, মুন্সিগঞ্জ-৩, নরসিংদী-৫, কিশোরগঞ্জ-৫, চাপাইনবাবগঞ্জ-১ ও পঞ্চগর-১। এসব আসনে সংঘাত, সংঘর্ষ, গুলি, নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন, হত্যার হুমকিসহ নানা রকম সহিংস ঘটনা ঘটেছে। যেসব ঘটনার তেমন কোন প্রতিকার হয়নি। পাঁতানো নির্বাচনে নৌকা, ঈগল, ট্রাক ইত্যাদি যা আছে সবই শেখ হাসিনার লোক। সবাই আওয়ামী লীগের। এমনকি লাঙ্গল, সোনালী আশ, নোঙ্গরও শেখ হাসিনার আশির্বাদপুষ্ট। তারপরেও এই নির্বাচনে নৌকায় ভোট না দিলে হাত-পা ভেঙ্গে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে বহু জায়গায়। নৌকায় ভোট না দিলে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার দরকার নাই মর্মে ভোটারগণকে আগাম হুশিয়ারি দেয়ার ঘটনা ঘঠছে অহরহ। এসবই আমাদের দাবীর যথার্থতা প্রমাণ করছে। দলীয় সরকারের অধিনে কোন নির্বাচনই সুষ্ঠু হয় না; এমনকি পাঁতানো নির্বাচনও সুষ্ঠু ও অবাধ হয় না।

চরমোনাই পীর বলেন, রাষ্ট্র নাগরিকদের সেবা দিতে বাধ্য। সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের সেবা কোন দল বা ব্যক্তি দেয় না বরং রাষ্ট্র দেয়। কিন্তু আমরা দেখছি, এই সরকারের লোকজন ভোটারগণকে নৌকায় ভোট না দিলে বা ভোট কেন্দ্রে না গেলে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের অধীনে প্রদত্ব সেবা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে। গরীব-অসহায় মানুষদের তারা বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ইত্যাদি বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে। কতটা নির্লজ্জ, বেহায়া এবং অমানবিক হলে নাগরিককে কেউ এ ধরণের হুমকি দিতে পারে, তা আমরা ভাবতেও পারি না। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতা এক প্রার্থী নিজেকে ভারতের প্রার্থী দাবী করে দাপট দেখাচ্ছে। সরকারী কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে ভোট চাচ্ছে। সার্বিকভাবে এই পাঁতানো ও শঠতাপূূর্ণ নির্বাচনেও এতো জঘন্যমাত্রায় এতো বেশি অনিয়ম, মাস্তানী ও অবৈধ ক্ষমতা প্রয়োগের ঘটনা ঘটছে যে, এটাকে আর নির্বাচন বলার কোন সুযোগ নাই। এটা মাফিয়া চক্রের প্রধান ঠিক রেখে আঞ্চলিক মাস্তান বাছাইয়ের তামাশায় পরিণত হয়েছে। এই কথিত নির্বাচন বিরোধী দলগুলোর দাবীর যথার্থতা আবারো প্রমান করলো যে, কোন দলীয় সরকারের অধিনে কোন সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হতে পারে না।

৭ জানুয়ারির নির্বাচন আমার আপনার মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়ার নির্বাচন। এই নির্বাচন আমার আপনার ভোট জালিয়াতি করে ক্ষমতাসীনদের সীমাহীন লুটতরাজ, জুলুম, খুন,গুম ও অনিয়ম জারি রাখার নির্বাচন। এই নির্বাচন দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করা, ব্যাংকগুলো শূন্য করা, চুরি করে কোটিপতি হওয়ার অবৈধ পদ্ধতিকে অব্যাহত রাখার নির্বাচন। এই নির্বাচন হলো ক্ষমতাসীনদের পারস্পরিক ক্ষমতা ভাগাভাগির নির্লজ্জ খেলা। ফলে এই নির্বাচনে ভোট দেয়ার মানে হলো, ক্ষমতাসীনদের সকল অন্যায়,জুলুম ও দুর্নীতিকে বৈধতা দেয়া। যা কোনভাবেই জায়েজ নয়। যাদের মধ্যে দেশপ্রেম আছে, যারা দুর্নীতি, জুলুম-লুটতরাজকে ঘৃণা করেন, যারা মানুষের অধিকারকে সম্মান করেন তারা কেউ ভোট কেন্দ্রে যাবেন না। যারা আল্লাহকে ভয় করেন, যারা মাজলুমের বদদোয়াকে ভয় করেন, তারা কেউ ভোট দেবেন না। যারা ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করেন, যারা দেশের জন্য জীবন উৎসর্গকারীদের সম্মান করেন তারা কেউ ৭ জানুয়ারি ভোট কেন্দ্রে যাবেন না। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবাইকে বলবো, আপনারা কেউ এই দেশ বিরোধী অবৈধ নির্বাচনে জালিমদের সহযোগীতা করবেন না। প্রশাসনের কর্মচারী-কর্মকর্তা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলবো, প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বশীল হিসেবে আপনারা জনগণের বিপক্ষে গিয়ে সরকারের কোন অবৈধ হুকুম তামিল করবেন না। আপনারা কেউ প্রহসনের নির্বাচনে সহযোগীতা করবেন না। এই জনবিরোধী প্রহসনের নির্বাচনে যারা সহযোগিতা করবে, জনগণ তাদেরকে কিছুতেই ক্ষমা করবে না।

বর্তমান দলকানা তাবেদার নির্বাচন কমিশনকে উল্লেখ্য করে চরমোনাই পীর বলেন, আপনারা যদি নিজেদের ভালো চান এবং দেশের মঙ্গল চান তাহলে এখনো সময় আছে, নির্বাচনী কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে পদত্যাগ করে চলে যান। জনগণ আপনাদের নাটক আর দেখতে চায় না। আমরা যদি গণহারে ভোট বর্জন করি তাহলে এই জালেম লুটেরারা বাধাগ্রস্থ হবে। আমরা ভোট বর্জন করলে জাতি, দেশের অর্থনীতি রক্ষা পাবে। আপনি ভোট বর্জন করলে মানবতা রক্ষার পথ উন্মোচিত হবে। জালেমদের বিদায় অবশ্যই হবে, ইনশাআল্লাহ। আমরা যদি জালিমের বিরুদ্ধে সবাই ঐক্যবদ্ধ এবং সুদৃঢ় থাকতে পারি, তাহলে অচিরেই জনগণের বিজয় হবেই হবে, ইনশাআল্লাহ। আমরা এই জাতিকে রক্ষা করতে চাই, দেশকে বাচাতে চাই, দেশের অর্থনীতিকে বাচাতে চাই, লুটতরাজের অবসান চাই। আমরা একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান চাই। আমরা রাজনীতিতে গুনগত পরিবর্তন চাই। আমরা দেশের মানুষের অধিকার ফেরত পেতে চাই। সেজন্য আমাদের ধারাবাহিক আন্দোলন সংগ্রাম চলবে। আমরা জনগণকে কর্তৃত্ববাদী এই জালিম সরকার বিরোধী গণ-আন্দোলনে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানাই। পাশাপাশি আমরা জনগণের অধিকার রক্ষার লক্ষে আন্দোলনরত সকল বিরোধী দলকে ধৈর্যের সাথে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাই।