রাজনীতি

‘একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে আ’লীগ দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে’

বাংলার কথা বাংলার কথা

প্রকাশিত: ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৯, ২০২৩

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, স্বাধীন বাংলাদেশে অনেক চড়াই-উৎড়াই হলেও এবারের সমস্যা অতিতের যেকোন সমস্যার চেয়ে জটিল ও বহুমাত্রিক। দেশ আড়্গরিক অর্থেই গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে সীমানার বাইরে সিদ্ধান্ত হচ্ছে। ভু-রাজনীতির জটিলতায় দেশ পরাশক্তির বিশেষ টার্গেটে পরিণত হয়েছে। অর্থনীতি প্রতিষ্ঠানিকভাবেই ধ্বংশ হয়ে গেছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে হত্যা করা হয়েছে, ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার জায়গা নষ্ট করে রাষ্ট্রকেই অকার্যকর করা হয়েছে। চিন্র, বুদ্ধি ও কথাবলার স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি আমাদেরকে চরমভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলছে। এমতাবস্থায় জাতির মুক্তির জন্য, মানবাধিকার এবং ভোটাধিকার রক্ষায়, রাজনৈতিক অধিকার রক্ষায়, ৭১ এর অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষায়, দেশের অর্থনীতি রক্ষায়, মানুষের জান-মাল রক্ষায় ও দেশকে দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে কি করণীয় তা নির্ধারণে সম্মিলিত পথ-পন্থা খুজে বের করতেই আজকের সংলাপ। ঐক্যমতের ভিত্তিতে মুক্তির পথ উম্মোচন করতে হবে।

মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে দেশের বিদ্যমান সংকটময় পরিস্থিতিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উদ্যোগে রাজনৈতিক দল, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও বিভিন্ন পেশাজীবী প্রতিনিধিদের সাথে জাতীয় সংলাপে লিখিত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় সংলাপে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানি, সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম , মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসানাত আব্দুল কাইয়ূম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি হাবিবুর রহমান নিজু, এবি পার্টির মহাসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণসংহতি আন্দোলনের জননেতা বাচ্চু ভুইয়া, বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরম্নল হক নূর, বিএফইজে’র সভাপতি এম. আব্দুল্লাহ, সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, বিশিষ্ট গবেষক ড. গোলাম মাওলা রনি, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দীন মাহমুদ স্বপন, সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদের সভাপতি ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানি, গণঅধিকার পরিষদের যগ্ম আহ্বায়ক কর্ণেল অব. মিয়া মশিউজ্জামান, গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জাগপার সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ এনডিপির মহাসচিব ড.শাহাদাত হোসেন সেলিম, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম, এনপিডির চেয়ারম্যান কেএম আবু তাহের, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সাল,  ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ প্রমুখ।

সংলাপে দেশে চলমান ১১টি সংকটের কথা তুলে ধরেন চরমোনাই পীর। যা নিম্নরূপ :
১. রাষ্ট্রব্যবস্থার অবনতি : আমরা সবাই জানি, সরকার হয় দলীয় এবং পরিবর্তনশীল। আর রাষ্ট্র হয় সকলের এবং তা অপরিবর্তনশীল। সরকার আসে-যায় কিন্তু রাষ্ট্র ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যায়। রাষ্ট্র একগুচ্ছ প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন শক্তিকেন্দ্র নিয়ে গড়ে ওঠে। সরকার সেসব প্রতিষ্ঠান ও শক্তিকেন্দ্র ব্যবহার করে কাজ করে। দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশের সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও শক্তিকেন্দ্রগুলোকে নানাভাবে ধ্বংশ করা হয়েছে। পুলিশ-র‌্যাব-আনসার, আধা সামরিক বাহিনী, বিজেবি, সামরিক বাহিনী, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে কত নির্মমভাবে ধ্বংশ করা হয়েছে তা আপনারা জানেন। ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বের দলীয় আনুগত্য, পেশাজীবি সংগঠনের লেজুরবৃত্তি, মিডিয়ার একাংশের অপতৎপরতা এবং বুদ্ধিজীবীদের একাংশের আচরন বিস্তারিত বিররণ দেয়া বাহুল্য হবে। এর ফলশ্রম্নতিতে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ ফাংশন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। দুর্নীতি, মুদ্রার মান নিয়ন্ত্রন, মুদ্রাস্ফিতি ও দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ, ঋণখেলাফি, টাকা পাচার ইত্যাদি ড়্গেেত্র সরকারের চরম অযোগ্যতা ও ব্যর্থতার প্রমান পাওয়া যায়।এ সকল ব্যর্থতার দায় নিয়ে সরকারের আগেই পদত্যাগ করা উচিত ছিল। কিন্তু সরকার তা- না করে, যেকোন উপায়ে পুনরায় ক্ষমতায় থাকতে চায়। এটা সরকারের চরম নিলর্জ্জতা ও ফ্যাসিবাদী চরিত্রের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ।

২.সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনাশ : আধুনিক রাষ্ট্রে সেপারেশন অফ পাওয়ার খুবই গুরম্নত্বপূর্ণ ও সর্বজনবিদিত একটি মৌলিক নীতি। সেপারেশন অফ পাওয়ার নিশ্চিত করা হয় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে। বর্তমান সরকার পরিকল্পনা করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে হত্যা করেছে। নির্বাচন কমিশনের মতো মৌলিক প্রতিষ্ঠানে বারবার দলান্ধ ব্যক্তি বসানো হয়েছে। বিচার বিভাগকে সরকারের আজ্ঞাবহ বানানো হয়েছে। নির্বাচনে বিরোধী নেতাদের অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্থ করতে আদালতকে ব্যবহার করে গণহারে বিরোধী নেতাদের অপরাধী সাব্যস্ত করে রায় দেয়া হচ্ছে। দুদককে বিরোধী নেতাদের দমন কমিশন বানানো হয়েছে। অডিটর জেনারেলের অফিসকে দলীয় দুর্নীতি আড়াল করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। সংসদ বহু আগে থেকেই প্রধানমন্ত্রীর আজ্ঞাদাসে পরিনত হয়ে আছে। রাষ্ট্রপতির চেয়ারেও এখন প্রধানমন্ত্রীর ভক্তিতে আপস্নুত ব্যক্তি বসানো হয়েছে। জনপ্রশাসনকে দলীয় কর্মী বাহিনীতে পরিনত করা হয়েছে। সাবেক মুখ্য সচিবগণ যেভাবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী রাজনীতিতে ভুমিকা রাখছেন, তাতেই বিষয়টা পরিস্কার।

৩.রাজনৈতিক সংস্কৃতি : গণতান্ত্রিক দলীয় রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে পরস্পর বিনাশী হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে সরকারী দল বিরোধী শক্তিকে ধ্বংশ করতে চায়। সেটা যেমন অপরাজনীতির মাধ্যমে তেমনি শারীরিকভাবেও। প্রতিবাদী সমাবেশে গুলি করা, মানুষ গুম করা তো বহুল চর্চিত সংস্কৃতি। লাখো মানুষের সমাবেশে রাতের অন্ধকারে সাউন্ড গ্রেনেড নিড়্গপে করা, নির্বিচারে গুলি করার নজীর জাতি দেখেছে। সাম্প্রতিক দিনে দুপুরে একই ধরণের নির্মমতা দেখেছে দেশবাসী। দলগুলোর ভেতরের অবস্থা নিয়ে নতুন করে কথা বলতে চাই না। প্রধানমন্ত্রী কার্যত একজন সম্্রাজ্ঞীতে পরিনত হয়েছেন। তাকে ঘিরেইসবকিছু আবর্তিত হচ্ছে। দ্বী-দলীয় মানসিকতাও দেশের রাজনীতির জন্য অশুভ পরিণতি ডেকে এনেছে। আজকে বিএনপি বিপদে পড়েছে মানে দেশে বিরোধী রাজনীতি শুণ্য হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। বহুদলীয় রাজনীতি থাকলে এই পরিস্থিতি তৈরি হয় না।

৪. নির্বাচনী ব্যবস্থার মৃত্যু : বিগত নির্বাচনগুলোতে নির্বাচন ব্যবস্থাকে হত্যা করা হয়েছে। একতরফা নির্বাচন, রাতে ভোট দেয়া, ভোট ডাকাতি, প্রার্থীদের ওপরে হামলা, মনোয়নপত্র দাখিলে বাধা, প্রার্থীর বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভুয়া মামলায় রায় দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা, কমিশন থেকে নিবন্ধন না দেয়াসহ হেন কোন অপকর্ম নাই যা এই সরকার ও তার কমিশন করে নাই। নির্বাচনের অবস্থা এতোটাই খারাপ যে, কোন কোন নির্বাচনে ৫% ভোটারও ভোট দিতে যায় নাই। ২০১৪ ও ২০১৮ এর অভিজ্ঞতা সবারই জানা। আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে ধরণের পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে তাতেও নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংসে এই সরকারের অপচেষ্টা খুবই স্পষ্ট। আধুনিক জাতি রাষ্ট্রে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংশের চেয়ে খারাপ আর কিছু হতে পারে না। নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংশ করা দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

৫. সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্ন : আমরা বারংবার বলছি, দেশ স্বাধীন হওয়ার অর্থ হলো, দেশের শাসন ড়্গমতায় কারা থাকবে, কোন পদ্ধতিতে দেশ পরিচালিত হবে তা নির্ধারণের এখতিয়ার জনগণের। এই ড়্গমতা দেশের বাইরে কারো কাছে যাওয়ার মানেই হলো, সার্বভৌমত্ব হারানো। বাংলাদেশে আওয়ামী সরকার রাষ্ট্রের সকল শক্তির ব্যবহার করে বিরোধী দলগুলোর রাজনৈতিক মাঠ এতোটাই সংকুচিত করেছে যে, ড়্গমতার পালাবদলে দেশীয় কোন শক্তি আর কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। ফলে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ করার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এখন বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত-আমেরিকার দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে আলোচনা হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক “আমরা আছি-দিল্লি আছে, দিল্লি আছে আমরা আছি” ধরণের বক্তব্য দেন, “তলে তলে আপোষ হয়েছে” মর্মে ঘোষণা দেন। সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিদেশী শক্তিকে আহ্বান জানান হাসিনা সরকারকে আবারো ক্ষমতায় রাখার ব্যবস্থা করতে। সার্বিকভাবে এটা এখন স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, দেশে ক্ষমতার পালাবদলের ইখতেয়ার আর জনতার হাতে নাই। স্বাধীনতার ৫২ বছরে এসে এই পরিস্থিতির চেয়ে দুঃখজনক আর কি হতে পারে?

৬. অর্থব্যবস্থা : দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির সাথে সাথে অর্থনীতির অবস্থাও ভয়াবহ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে ঠেকেছে। কোনমতে আগামী তিনমাসের আমদানী ব্যয় নির্বাহ করা যাবে। বাংলাদেশের মতো একটি আমদানী নির্ভর দেশের জন্য এটা কতটা ভয়াবহ পরিস্থিতি তা বলা বাহুল্য। দেশে যেভাবে আইন করে দুর্নীতিকে বৈধতা দেয়া হয়েছে তার নজীর বিরল। রিজার্ভের টাকা দেয়া হলো রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলে; যার বড় অংশ এখন খেলাফি ঋণে পরিনত হয়েছে। এর বাইরে রিজার্ভের অর্থে গঠন করা হয়েছে লং টার্ম ফান্ড (এলটিএফ) ও গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ), বাংলাদেশ বিমানকে উড়োজাহাজ কিনতে সোনালী ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ফান্ড দেওয়া হয়েছে এবং পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের খনন কর্মসূচিতে রিজার্ভ থেকে অর্থ দেয়া হয়েছে। যার অধিকাংশই আর রিজার্ভে ফেরত আসবে না। ঋণখেলাফির পরিমান অকল্পনীয়।২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন দেশে মোট খেলাফি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এখন তা দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ ১৪ বছরে খেলাফি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৭ গুণ। শেয়ার বাজারকে শেষ করে দেয়া হয়েছে। আর্থিকখাতের ব্যবস্থাপনা ধ্বংশ করা হয়েছে। উন্নয়নের নামে টাকা লুটপাটের কথা আর নতুন করে বলার কিছু নাই। সার্বিকভাবে দেশের আর্থিক ভবিষ্যতও মারাত¥ক হুমকির মুখে। মাথাপিছু ঋণ ১ লড়্গ টাকার উপরে যা অত্যাšত্ম বিভীষিকাময়।

৭. একদেশদর্শী প্রচারমাধ্যম ও বুদ্ধিজীবি শ্রেণি : প্রচার মাধ্যমকে রাষ্ট্রের ¯ত্মম্ভ বিবেচনা করা হয়। আর বুদ্ধিজীবী শ্রেণী রাষ্ট্রের ও সমাজের বিবেক হিসেবে স্বীকৃত। সরকারকে যথাযথ বুদ্ধি দেয়া, সরকারের কাজের সমালোচনা করা, নাগরিকের অধিকার খর্ব হলে ভুমিকা রাখা প্রচার মাধ্যম ও বুদ্ধিজীবিদের নৈতিক দায়িত্ব। তারা এই দায়িত্ব পালন করলে জাতি পথ হারায় না। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান বা¯ত্মবতা কী,তা সবাই জানে। একশ্রেণীর প্রচার মাধ্যম পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে সরকারের অন্যায়ের পড়্গে প্রচারনা চালানোর জন্যে। বুদ্ধিজীবী এবং সুশীল সমাজের ভূমিকাও জনগণকে চরমভাবে হতাশ করছে।

৮. পোষাক খাত : বাংলাদেশের রপ্তানীমূখী অর্থনীতি পোষাক খাত নির্ভর। কিন্তু পোষাক খাতে শ্রমিক শোষন, অভ্যšত্মরিণ রাজনীতির কারণে পোষাকের বাজারে অনিশ্চয়তা আমাদেরকে মারাত¥কভাবে ভাবিয়ে তোলে। আবারো একটি একতরফা নির্বাচন হলে ইউরোপ, আমেরিকার মতো পোষাক রপ্তানীর প্রধান বাজার আমাদের হারাতে হবে। যা আমাদেরকে বিপর্যয় ও অস্থিরতার চরমে পৌঁছে দিবে।

৯. সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংকটের সূত্রপাত : ২০১১ সালের ১০ মে তারিখে প্রদত্ত (৪-৩) উচ্চ আদালতেরবিভক্ত সংড়্গপ্তি আদেশ নিয়েই সংকটের সূত্রপাত- ‘আদালত সংড়্গপ্তি আদেশে বলেছিলেন, সংসদ চাইলে দুটি নির্বাচন এ ব্যবস্থায় (তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে) হতে পারে।’ ‘সংসদ চাইলে আরও দু টার্ম এরূপ সরকারের অধীনে হতে পারে বলে সংড়্গপ্তি রায়’ দেন আপিল বিভাগ। সংড়্গপ্তি আদেশটি প্রদানের অব্যবহিত পরে সরকারের পড়্গ থেকে দাবি করে বলা হয়, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতি আদালত বাতিল করেছেন। আদালতের রায়কে অস্বীকার করা কখনো সম্ভব নয়। আইনের শাসন মানলে আদালতের রায় মেনে চলতে হবে। রায়ের পর্যবেড়্গণ অংশে বলা হয়েছে, সংসদ মনে করলে পরবর্তী দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে। তবে বিচার বিভাগকে জড়িত করা যাবে না।’ তথ্যসূত্র: (প্রথম আলো, ১ জুন ২০১১)। সরকারের এমন দাবির ভিত্তিতে আদালতের আদেশ পালন করতেই, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাদ দিয়ে নবম জাতীয় সংসদ ২০১১ সালের ৩০ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে। প্রসঙ্গত, প্রায় ১৬ মাস পর ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১২ সালে প্রকাশিত আপিল বিভাগের বি¯ত্মারিত রায় এ ড়্গেেত্র অপ্রাসঙ্গিক। কারণ, ১০ মে ২০১১ তারিখের সংড়্গপ্তি আদেশের ভিত্তিতেই, বি¯ত্মারিত রায়ের জন্য অপেক্ষা না করেই, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধান থেকে বিলুপ্ত করা হয়। সরকারের এই অবস্থানের বিপরীতে বিরোধী দল, নাগরিক সমাজ এবং ভোটারদের বিরোধিতা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ সংসদে তার ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা কাজে লাগিয়ে পরবর্তী দুই জাতীয় নির্বাচনের সময়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহাল থাকার আদালতের নির্দেশ অমান্য করেছে। যা এক আšত্মর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে পঞ্চদশ সংশোধনীকে ‘অসাংবিধানিক সংবিধান সংশোধনী’ বলে আখ্যায়িত করেন।

১০. একতরফা নির্বাচন নির্বীঘ্ন করার লক্ষে বিরোধী মতকে স্তব্ধ করার জন্য বিভিন্নমুখী ষড়যন্ত্র : ক. বাংলাদেশের বিরোধী দল নির্বাচনের আগে চরম দমন-পীড়নের মুখোমুখি। খ. শত শত মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা, গায়েবী মামলা ও বিরোধীদলের মৃত ব্যক্তির নামে কারাদন্ড প্রদান। যা বিচার বিভাগের দেউলিয়াত্ব ও সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্র প্রকাশ করে। গ. জেলখানার ধারণ ড়্গমতার ৩ গুন আসামী কারাগারে বন্দী, যা সম্পূর্ন মানবতা বিরোধী, অমানবিক ও স্বাস্থ্য ঝুকিপূর্ণ।

১১. সরকারের ছত্রছায়ায় দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম: ক. দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতি যা মানুষের জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলেছে। দুস্থ মানুষের মাঝে হাহাকার বিরাজ করছে। অধিকাংশ মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। খ.মধ্যসত্ত্ব ভোগিরা সম্পদের পাহাড় গড়ছে। সাধারণ মানুষ দিন দিন গরিব হচ্ছে, আর দুর্নীতিবাজরা দিন দিন সম্পদের পাহাড় গড়েছে।

সকল রাজনৈতিক দল ও জন সাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে চরমোনাই পীর বলেন, আসুন আমরা জাতীয় ঐক্য গড়েতুলে সকল দুর্নীতিবাজ, টাকা পাচারকারী, ব্যাংক লুন্ঠনকারী ও অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে প্রতিহত করে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধ করি। দুর্নীতিকে মুলৎপাটন করতে পারলে, অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে প্রতিহত করতে পারলে চালের দাম কেজি প্রতি সর্বোচ্চ ৪০ টাকা করা যায়। একই ধারাবাহিকতায় ডাল, তেল ও অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রী মূল্য ৩০% কমিয়ে আনা যায়। উৎপাদনমুখী শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরী ২০,০০০ (বিশ হাজার) টাকা নির্ধারণ করা যায়। সকল পরিবহণের যাত্রীভাড়া ৩০% কমানো যায়। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির বিলও ৩০% কমানো যায়। তিনি বলেন, বিদ্যমান জাতীয় সংকট নিরসনে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে স্বৈরাচারী রাজনৈতিক ব্যবস্থার পতন ঘটিয়ে মানুষের ভোটাধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, নাগরিক অধিকার ও ধর্মীয় অধিকার নিশ্চিত করে বাংলাদেশকে একটি দুর্নীতি, দুঃশাসন ও সন্ত্রাসমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ কল্যাণরাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তুলি।

সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষে আমরা সংলাপে ৩ দফা প্রস্তাব পেশ করা হয় : ১.বিতর্কিত নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত একতরফা তফসিল বাতিল করে গ্রেফতারকৃত বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মুক্তি দিয়ে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরী করতে হবে। ২.বর্তমান বিতর্কিত পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। ৩. কার্যকরী সংসদ, রাজনৈতিক সংহতি এবং শতভাগ জনমতের প্রতিফলনের জন্যপিআর (চজ)বা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন’ই অধিকতর উত্তম পদ্ধতি; যা বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ করেছে তা প্রবর্তন করতে হবে।