সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ইন্তেকাল করেছেন। তার মৃত্যুর সংবাদ গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন ও দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ইন্তেকাল করেছেন। গুরুতর অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুর খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপক গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করা হয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ৮০ বছর বয়সে মারা গেছেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ফেসবুকে ঘোষণা করেছে, ‘আমাদের প্রিয় নেত্রী আর আমাদের মাঝে নেই। তিনি মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার রাতে চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক। তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল, কিন্তু তার বয়স এবং সামগ্রিকভাবে খারাপ স্বাস্থ্যের কারণে একই সময়ে একাধিক চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব ছিল না।
এতে আরো বলা হয়, ২০ বছরের মধ্যে দেশের প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বিএনপিকে বিজয়ী করার পর ১৯৯১ সালে বেগম জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী সরকার প্রধান হন।
মার্কিন বার্তাসংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আইনি লড়াই ও অসুস্থতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। তার বিরুদ্ধে আনা মামলাগুলোকে তিনি ও তার দল সবসময়ই ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করে আসছিলেন। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট তাকে সর্বশেষ দুর্নীতি মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়। এই রায়ের ফলে আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সব বাধা দূর হয়েছিল।
আগের সরকারের সময় অন্তত ১৮ বার তার বিদেশ ভ্রমণের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হলেও গত জানুয়ারির শুরুতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়। উন্নত চিকিৎসা শেষে গত মে মাসে তিনি যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে এসেছিলেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, যদিও বেগম খালেদা জিয়া ২০০৬ সাল থেকে ক্ষমতার বাইরে ছিলেন এবং বেশ কয়েক বছর জেল অথবা গৃহবন্দী ছিলেন, তবুও তিনি এবং তার দল বিএনপি প্রচুর সমর্থন অর্জন করেছে।
এতে আরো বলা হয়, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের জন্য বিএনপিকে এগিয়ে থাকা দল হিসেবে দেখা হচ্ছে। তার ছেলে এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, ৬০ বছর বয়সী তারেক রহমান প্রায় ১৭ বছর নির্বাসন থেকে গত সপ্তাহে দেশে ফিরেছেন। দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য তাকে একজন শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রয়টার্স আরো জানায়, ১৯৮১ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে বেগম খালেদা জিয়ার স্বামী নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে লাজুক এবং নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে বর্ণনা করা হত। তার স্বামী সামরিক নেতা এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ১৯৮১ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে হত্যা করা হয়। এর তিন বছর পর তিনি তার স্বামীর প্রতিষ্ঠিত বিএনপির প্রধান হন এবং দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক পশ্চাদপদতা থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করার লক্ষ্য অর্জনের প্রতিশ্রুতি দেন।
এদিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়া ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে জনগণের ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণের পর আনুষ্ঠানিকভাবে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। তিনি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন তত্ত্বাবধানের জন্য বাংলাদেশে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করেন।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর রাজধানী ঢাকার একটি হাসপাতালে মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় মারা গেছেন বলে তার দল ও স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে। গত ২৩ নভেম্বর ফুসফুসে সংক্রমণের লক্ষণ নিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের সমস্যায় ভুগছিলেন বলে জানিয়েছে তার চিকিৎসকরা।
তার শেষ দিনগুলোতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জনগণকে খালেদা জিয়ার জন্য প্রার্থনা করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি তাকে ‘জাতির জন্য পরম অনুপ্রেরণার উৎস’ বলে অভিহিত করেছিলেন।