২৭ ডিসেম্বর, ২০২৫

ভাঙন নয়, আরও বিস্তৃত হচ্ছে আট দলীয় জোট

ভাঙার গুঞ্জনের মধ্যেই জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ সমমনা আট দলের নির্বাচনকালীন জোট আরও বিস্তৃত হচ্ছে। এই জোটে নতুন করে যুক্ত হতে যাচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ও লেবার পার্টি। আট দলের আসন সমঝোতার শেষ পর্যায়ে এসে নতুন চারটি দলের অন্তর্ভুক্তির আলোচনা শুরু হওয়ায় সমঝোতা চূড়ান্ত করতে কিছুটা সময় লাগছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে দিনরাত বৈঠক করে দ্রুত সমাধানে পৌঁছাতে চেষ্টা চালাচ্ছে দলগুলো।

এর মধ্যেই গুঞ্জন ওঠে, চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস জোট থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। লিয়াজোঁ কমিটির একাধিক বৈঠকেও একক প্রার্থী নির্ধারণে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়ায় এই আলোচনা জোরালো হয়। আসন চাহিদা বেশি থাকায় জটিলতা তৈরি হয়েছে বলেও জানা গেছে। এমনকি প্রত্যাশা অনুযায়ী আসন না পেলে আলাদা প্ল্যাটফর্ম গঠনের আভাসও দেয় এই দুই দল।

তবে এসব গুঞ্জনের মধ্যেই আট দলের নেতারা জানাচ্ছেন, জোট ভাঙছে না; বরং আরও শক্তিশালী হচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ সমমনা আট দলের সঙ্গে এনসিপি, এবি পার্টি, এলডিপি ও লেবার পার্টি যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। নতুন করে চারটি দলের অন্তর্ভুক্তির কারণে আসন সমঝোতায় কিছুটা বিলম্ব হলেও শিগগিরই সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে তারা আশা প্রকাশ করছেন।

দীর্ঘদিন ধরে পাঁচ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে রয়েছে জামায়াতে ইসলামীসহ এই আট দল। জোটের বর্তমান শরিকদের মধ্যে রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, জাগপা ও বিডিপি।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করে জোটটি। নেতাদের দাবি, ইতোমধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ আসনে সমঝোতা হয়েছে। বাকি আসনগুলোতে সম্ভাব্য বিজয়ী প্রার্থী, শীর্ষ নেতৃত্বের অবস্থান এবং মাঠপর্যায়ের শক্তি বিবেচনায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এজন্য দলগুলো নিজস্ব উদ্যোগে ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান দিয়ে জরিপ চালিয়েছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতেই লিয়াজোঁ কমিটি দফায় দফায় বৈঠক করছে।

জোটের নেতারা জানান, ইসলামি শক্তির ‘একবাক্স’ নীতিতে কারো একক নেতৃত্ব নয়, পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতেই প্রার্থী চূড়ান্ত হবে। আসন বণ্টনে সবচেয়ে বড় দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী সর্বাধিক আসন পাবে। এরপর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, তারপর খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস প্রায় সমপর্যায়ের আসন পাবে। বাকি আসনগুলো খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাগপা ও বিডিপির মধ্যে বণ্টন হবে।

এদিকে জুলাই আন্দোলনের নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত এনসিপির সঙ্গে জামায়াত জোটের আসন সমঝোতার আলোচনা এগিয়েছে। জানা গেছে, এনসিপি শুরুতে প্রায় ৩০টি আসন দাবি করলেও চূড়ান্ত সংখ্যা নির্ধারণে এখনো বিশ্লেষণ চলছে। মাঠপর্যায়ে সংগঠন দুর্বল হলেও জুলাই আন্দোলনে ভূমিকা এবং সংস্কারের পক্ষে অবস্থানের কারণে এনসিপিকে গুরুত্ব দিচ্ছে জোট।

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, একক, যৌথ বা আসন সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে তাদের দল শুরু থেকেই উন্মুক্ত। বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। তবে সংস্কার প্রশ্নে কারা বেশি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ—এটাই এনসিপির কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

এনসিপির সঙ্গে থাকা গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের শরিক এবি পার্টিও জামায়াত জোটে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা দেখছে। তবে একই জোটের অপর শরিক রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন কোনো জোটে যেতে রাজি নয়। অন্যদিকে, কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ নেতৃত্বাধীন এলডিপিও বিএনপি জোট ছাড়ার পর জামায়াত জোটে যোগ দেওয়ার আলোচনা করছে। এলডিপি ১০টি আসন চাইলেও চার-পাঁচটি আসনে সমঝোতা হলে তারা জোটে যোগ দিতে পারে বলে জানা গেছে। বিএনপি জোট থেকে বঞ্চিত লেবার পার্টিও জামায়াতের দিকে ঝুঁকেছে; সে ক্ষেত্রে ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের জন্য একটি আসনের কথা আলোচনায় রয়েছে।

জোটের নেতারা জানান, পরিধি বাড়ানো ও আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করতে নিয়মিত বৈঠক চলছে। জোট ভেঙে যাচ্ছে—এমন আশঙ্কা নাকচ করেছেন তারা।