গাজায় যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত নতুন সহায়তা মডেলের কড়া সমালোচনা করেছেন ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থার প্রধান ফিলিপ ল্যাজারিনি। মঙ্গলবার (২৭ মে) যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলটিতে বিতরণ কার্যক্রম চলাকালে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির একদিন পর তিনি এ মন্তব্য করেন। টোকিও থেকে এএফপি জানায়, মে মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ) চালু করে, যা জাতিসংঘ ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। দখলাদার ইসরায়েল এই মডেলকে সমর্থন দিয়েছে এবং বলেছে, এতে করে হামাসের হাতে ত্রাণ পৌঁছে না। মঙ্গলবার দক্ষিণ গাজার রাফাহ অঞ্চলের এক বিতরণকেন্দ্রে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি ভিড় জমালে বিশৃঙ্খল দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।
ইউএনআরডব্লিউএ প্রধান জাপানে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা গতকাল দেখেছি ক্ষুধার্ত মানুষ কীভাবে তারের বেড়ার গায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে, মরিয়া হয়ে খাবারের জন্য ধাক্কাধাক্কি করছে। এটি ছিল বিশৃঙ্খল, মর্যাদাহীন এবং অনিরাপদ। আমি মনে করি, এটি সম্পদের অপচয় এবং নৃশংসতা থেকে দৃষ্টি সরানোর কৌশল। আমাদের হাতে ইতোমধ্যেই একটি কার্যকর ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা রয়েছে। এই মুহূর্তে দুর্ভিক্ষ এগিয়ে আসছে, সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। তাই মানবিক তৎপরতাকে এখনই জীবনরক্ষা কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দিতে হবে।
মঙ্গলবারের এই দৃশ্য আসে এমন এক সময়ে, যখন ২ মার্চ থেকে ইসরাইল আরোপিত পূর্ণাঙ্গ ত্রাণ অবরোধ কিছুটা শিথিল হয়েছে। এতে অঞ্চলটিতে তীব্র খাদ্য ও ওষুধের সংকট তৈরি হয়।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু পরবর্তীতে কেন্দ্রটিতে ‘সাময়িক নিয়ন্ত্রণ হারানোর’ কথা স্বীকার করলেও এক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা বিতরণ কার্যক্রমকে ‘সফলতা’ বলে অভিহিত করেন।
জিএইচএফকে এমন এক মডেল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, যা ইসরাইলের সামরিক লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করছে, ফিলিস্তিনিদের বাদ দিচ্ছে, জাতিসংঘ ব্যবস্থাকে উপেক্ষা করছে এবং মানবিক নীতিমালার প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়।
ল্যাজারিনি বলেন, ইসরাইলের প্রস্তাবিত ত্রাণ বিতরণ মডেল মৌলিক মানবিক নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এটি গাজার বৃহৎ একটি অংশের, বিশেষ করে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ জনগণের জন্য জরুরি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ হবে। আগে আমাদের গাজায় ৪০০টি বিতরণ কেন্দ্র ছিল। এখন এই নতুন ব্যবস্থায় কেন্দ্রের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সর্বোচ্চ তিন বা চারটিতে। ফলে এটি মানুষকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হতে প্ররোচিত করার একটি উপায়ও হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরাইল আক্রমণ এবং এর পরবর্তী সময়ে গাজায় ভয়াবহ যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউএনআরডব্লিউএ’র বিরুদ্ধে ইসরাইলের সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে। এএফপির হিসাব অনুযায়ী, ওই হামলায় ১,২১৮ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন বেসামরিক মানুষ। ইসরায়েল দাবি করে, ইউএনআরডব্লিউএ’র কিছু কর্মী ওই হামলায় অংশ নিয়েছিল। এরপর জাপানসহ একাধিক দেশ সংস্থাটির অর্থায়ন সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। হামাস ওই হামলায় ২৫১ জনকে জিম্মি করে, যাদের মধ্যে এখনও ৫৭ জন গাজায় অবস্থান করছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, এদের মধ্যে ৩৪ জন ইতোমধ্যে মারা গেছে। হামাস-শাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর থেকে সোমবার পর্যন্ত সেখানে আরও অন্তত ৩,৮২২ জন নিহত হয়েছে। ফলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় মোট প্রাণহানি দাঁড়িয়েছে ৫৩,৯৭৭ জনে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।