
রাজারবাগ দরবার শরীফের পীর সম্পর্কে প্রতিবেদন করার জন্য বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভির স্টাফ রিপোর্টার ইয়াসমিন আক্তার অধরার বিরুদ্ধে দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মামলা বিষয়ক পরবর্তী কোনো পদক্ষেপ না নিতে এবং অবিলম্বে মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন।
আর্টিকেল নাইনটিন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুক ফয়সল বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সাংবাদিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাসের শুরু থেকে এই আইনের বিতর্কিত ধারাগুলোর অপব্যবহার করে যেভাবে সাংবাদিক ও অধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করা হচ্ছে, এই মামলা সেই ধারাবাহিকতায় নতুন সংযোজন। এই ধরনের মামলা স্বাধীন ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতাকে সবসময় ক্ষতিগ্রস্ত করে।
রাজধানীর রাজারবাগ দরবার শরীফকে কেন্দ্র করে পীর দিল্লুর রহমান ও তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মামলা, সারাদেশে অসংখ্য মানুষকে হয়রানি, জমি দখলসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগের বিষয়ে অধরা রিপোর্ট করেছে। পীর দিল্লুর রহমানের অন্যতম সহযোগী শাকেরুল কবির বাদী হয়ে এই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৪, ২৫ ও ২৯ ধারায় মামলাটি করেন। গত মার্চ মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক সরকারকে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ অবিলম্বে স্থগিত করার’ আহ্বান জানিয়েছিলেন।
এমনকি বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মার্কিন বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়ার নেতৃত্বে সফররত মার্কিন প্রতিনিধিদলকে আশ্বাস দিয়েছেন যে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করা হবে। মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আমাদের কথা হয়েছে। আমি তাদের একই কথা বলেছি যা আমি আগেও বলেছিলাম। আমি তাদের বলেছি যে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করা হবে।’
এটি কিছুকে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কেন নাগরিকদের এমন একটি আইনে শাস্তি পেতে হচ্ছে, যা ত্রুটিপূর্ণ হিসেবে স্বীকৃত এবং যেটি সংশোধনের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।
এই ধাক্কার বর্তমান সময়ের সবচেয়ে উজ্জ্বল উদাহরণ হল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরার মামলা। তিনি এই আইনের মামলায় ১১ মাস ধরে কারাগারে বন্দি রয়েছেন। এই সপ্তাহের শুরুতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে দায়ের করা দুটি পৃথক মামলায় তার জামিন মঞ্জুর করে দেওয়া হাইকোর্টের আদেশ সুপ্রিম কোর্ট আরও চার মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। তার পরবর্তী শুনানির তারিখে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, একই সময়ে আইনমন্ত্রী বলেছেন যে আইনটির অধীনে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল, তা সংশোধন করা হবে।