
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, দেশে জালেম ও স্বৈরাচার সরকার জগদ্দল পাথরের মত বসে আছে। এই জালেম ও মিথ্যাচারদের বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ৭১’ এ মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ, ইসলাম ও ঈমান বাঁচানোর আন্দোলন করতে হবে। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও মানুষকে ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য আন্দোলন করতে হয়। জীবনবাজী রেখে যারা দেশকে স্বাধীন করেছে, সেই মুক্তিযোদ্ধাদের চোখে পানি। দেশে একটি ফ্যাসিবাদ, জালিম ও মিথ্যাবাদী সরকার ক্ষমতায় বসে আছে। এই ফ্যাসীবাদের বিরুদ্ধে জনগণকে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ভোট চোর, ভোট ডাকাত সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ মাঠে নেমে আসলে এরা পালাতে বাধ্য হবে। আজ মানুষের বাক-স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। অনুমতি নিয়ে কথা বলতে হয়, এটা কী স্বাধীনতা? মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। অথচ আজ মানুষের কোন অধিকার নেই। কথা বলার স্বাধীনতা নেই। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ফ্যাসীবাদী সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় মুক্তিযোদ্ধাসহ সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
আজ (২১ জুলাই) শুক্রবার রাজধানীর কাকরাইলস্থ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটর স্যোসাল গার্ডেন মিলনায়তনে ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধা সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আবদুল ওয়াদুদের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, ই সলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, মহাসচিব প্রিন্সিপাল মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, সহকারি মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম, ইসলামী যুব আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আতিকুর রহমান মুজাহিদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি শরিফুল ইসলাম রিয়াদ প্রমূখ।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চুরি হয়েছে। যারা স্বাধীনতা চায়নি তারা আজ স্বাধীনতার কথা বলে। মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণায় যা ছিলো তা আজ নেই। তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সরকার বিরোধী আন্দোলনে একসাথে লড়াইয়ে নামবে বলে আমি আশাবাদী। এ লড়াই বাচার লড়াই। বরিশালে মুফতী ফয়জুল করীমকে অসম্মান করেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সেদিন যা বলেছেন তা ঘৃণ্য, আমি এই বক্তব্যের জন্য নিন্দা জানিয়েছি।
সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেমকে সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওয়াদুদকে সিনিয়র সহ-সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ খালেকুজ্জামানকে সেক্রেটারী জেনারেল করে ২০২৩-২০২৫ সেশনের নতুন কমিটি ঘোষণা করেন চরমোনাই পীর।
সম্মেলনে ১১ দফা প্রস্তাবনা উপস্থাপনা করেন ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ বাংলাদেশের সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আবুল কাশেম।মুক্তিযোদ্ধা সম্মেলন ২০২৩ এর ১১ দফা সম্মলন ঘোষণা হলো-
১. ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ অনুযায়ী ‘বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করছি।
২. ৫২ বছরে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ লুটেরা, টেন্ডারবাজ, দুর্নীতিবাজ ও সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে দেশের স্বাধীনতা স^ার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পতিত হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দুর্নীতি, দুঃশাসন, লুটপাট, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও সিন্ডিকেট মুক্ত পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়তে আজকের মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ দেশবাসীকে দেশের ধর্মীয় আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক নেতা পীর সাহেব চরমোনাই এর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হতে আহবান জানাচ্ছে।
৩. অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটে তাদের সরকার প্রতিষ্ঠায় পীর সাহেব চরমোনাই এর দাবী অনুযায়ী জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের প্রতি আজকের সম্মেলন একত্বতা প্রকাশ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঘোষিত কর্মসূচি সফলে সকলকে আহবান জানাচ্ছে।
৪. নির্বাচনে কালোটাকা ও পেশীশক্তির ব্যাবহার নিষিদ্ধ করতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানাচ্ছে।
৫. ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের উপর ভোটের দিনে একাধিকবার হামলা এবং সিইসির দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং এ ঘটনার সাথে জড়িত ও পরিকল্পনাকারীদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবী জানাচ্ছে। পাশাপাশি ঢাকা ১৭ আসনের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরু আলমের উপর হামলাকারীদেরকে গ্রেফতার করার দাবি জানাচ্ছে।
৬. আজকের এই সম্মেলন রাজনীতিকদের লাগামহীন আক্রমনাত্মক বক্তব্য পরিহার করে শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ আয়োজনে সকল দলের প্রতি আহবান জানাচ্ছে।
৭. ভিক্ষুক ও কর্মহীনদের পূনর্বাসনে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আহবান জানাচ্ছে।
৮. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে মজুদদার ও ব্যাবসায়ী সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করতে আহবান জানানো হচ্ছে।
৯. উন্নয়নের নামে সরকারদলীয় কন্টাকটার ও সরকারী কর্মকর্তাদের যোগসাজশে লুটপাট করা রাস্ট্রীয় অর্থ সরকারি কোষাগারে ফিরিয়ে আনতে একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য ক্ষমতাশালী কমিশন গঠনের আহবান জানাচ্ছে।
১০. বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে এনে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা আহবান জানাচ্ছে।
১১. রাজনীতিতে বিদেশী শক্তির প্রভাব বন্ধের দাবী জানাচ্ছে।